🌧️ ভূমিকা:-
সেদিন টিউশনি থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ শুরু হলো এক ঝড়ো বৃষ্টি। চারদিক অন্ধকার, বাতাস যেন ধেয়ে আসছে বুকের মধ্যে। বুঝলাম, এই অবস্থায় আর বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। সামনে ভাঙা এক পুরোনো কাঁচা বাড়ি দেখে সেখানেই গিয়ে দাঁড়ালাম। অন্তত কিছুটা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবো।আমার সারা শরীর ভিজে কিন্তু উপায় নেই, তাই একটু দাঁড়িয়ে গেলাম।
কিন্তু তখনও জানতাম না, এই বাড়ি আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে অতীতের এক করুণ স্মৃতিতে…
🏚️ অজানা আতঙ্ক:-
ঝড়ো হাওয়ায় দুলতে থাকা হ্যারিকেনটা হঠাৎ নিভে গেল। ঝড়ের গতিবেগ আরও বেশি বাড়ছে ।ভয় ও লাগছে আমি দূরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছি । গা ছমছমে অন্ধকারে কোথা থেকে যেন এক আঁশটে গন্ধ আসতে লাগলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে, বুকে চাপ অনুভব করছি।
ঠিক তখনই এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকালো আকাশ। সেই আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম, এক অর্ধ ছায়াময় নারী আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
👻 দেখা হলো দিদির সঙ্গে:-
“ও দিদি…?” — আমি চিৎকার করে উঠলাম।
“তুই কোথায় ছিলি এতদিন?কতদিন পর তোকে দেখছি , মা তোকে নিয়ে খুব চিন্তায়…”
আমি দিদিকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম, কিন্তু দিদি বললো,
“না… আমাকে ছুঁতে পারবি না ভাই।”
তার গলায় এক অচেনা ভার।চোখ টা কেমন যেনো লাল রং , তবে মুখে ছিল এক অপার্থিব শান্তি। বললো,
“চল, তোকে বাড়ি পৌঁছে দিই।”
🚶♂️ ফিরে যাওয়া:-
বৃষ্টিটা তখন কিছুটা থেমে এসেছে। আমি আর দিদি হাঁটতে লাগলাম—কথা বলতে বলতে, ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মেখে বাড়ির দিকে ফিরছি। তবে গন্ধটা তখনও আমার নাকে লেগে ছিল। হয়তো ভিজে মাটির বা কোনো পানা পুকুর থেকে আসছে হয়তো।
হঠাৎ বললাম,
“চল আজ মাকে বলি খিচুড়ি আর বেগুনি বানাতে।”
দিদি হাসলো,
“নিজের খেয়াল রাখিস, বাবা-মাকে দেখিস। বেশি রাত করিস না।”
এই বলতে বলতে আমরা প্রায় বাড়ির কাছেই চলে আসলাম ।
ঘরের উঠোনে পৌঁছে পিছনে তাকালাম — দিদি আর নেই।
দিদি বলে ডাকতে যাবো হঠাৎ মনে হলো দিদি .....
সে তো আমাদের থেকে কয়েকদিন আগেই হারিয়ে গেছে। তাহলে এতক্ষণ কে ছিল ..
আগের বছর কালবৈশাখীর সময় টিউশনি থেকে ফেরার পথে একটা গাছ আমাদের গায়ে পড়ে যায় ।যদিও দিদি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আর গাছ টা দিদির গায়ে পড়ে যায় ।
বাড়ি নিয়ে আসার আগেই দিদি শান্ত হয়ে যায় ..
একে বারে শান্ত ......
ওই মুখ টা আমার এখনো চোখে ভাসে...
🕯️ ফিরে দেখা স্মৃতি:-
দরজা খোলার শব্দপেলাম...
মা জিজ্ঞেস করলো,
এই আসার সময় হলো ? বৃষ্টিতে আটকে গেছিস বুঝি?”
আমি মাথা নাড়লাম। তবে মাকে দিদির কথা কিছু বললাম না।
যাহ তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে আই দেখি , খিচুড়ি আর বেগুনি বানিয়েছি খাবি আয়।
খিচুড়ি ....?
ওই দিন রাতে মা খিচুড়ি বানিয়েছিল যদিও ওটা খাওয়া হয়নি কারো ।
মা বললো হ্যাঁ টিউশনি যাবার আগে তো চাল আর ডাল দিয়ে গেলি ।।
আমি চুপ হয়ে দেখে গেলাম ...
স্কুল থেকে সোজা আমি টিউশনি গেছি তাহলে কে দিয়ে গেছে ।
কথা না বাড়িয়ে সোজা আমাদের ঘরে ঢুকে দিদির ফটোর দিকে তাকালাম। সেই রজনীগন্ধার মালাটা শুকিয়ে গেছে। মনে হলো ছবির দিক থেকে যেন দিদি হাসছে আর বলছে,
“ভাই, একবছর তোরা ভালো করে খাসনি। আজ থেকে ঠিকমতো খাস।”
আমিও আর দেরি না করে খাওয়া শেষ করে ঘুমোতে গেলাম
মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন?
সত্যি কি এটা আমার মনের ভুল নাকি দিদি এসেছিল ?
🔚 শেষ দেখা:-
সকালে উঠে দেখি বাবা দিদির ছবি নিয়ে যাচ্ছেন। আজ দিদির প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকী। পুজোর আয়োজন হচ্ছে, ছবি সাজানো হচ্ছে মালা দিয়ে। আমি বললাম,
“বেল ফুল দিও, ওর প্রিয় ছিল।”
অনেক লোকজন আসলো পুজোয়, শুধু দিদি আর এল না…
🖤 ভাই-বোনের সম্পর্ক:
ভাই-বোনের সম্পর্ক—এক অনন্য মেলবন্ধন। ঝগড়া, রাগ, খুনসুটি—সব কিছুতেই যে ভালোবাসার ছোঁয়া মিশে থাকে। কাছাকাছি থাকলে তা টের পাওয়া যায় না, কিন্তু হারিয়ে গেলে তার শূন্যতা হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
আজও মনে হয়,
সেই রাতে কি সত্যি দিদি এসেছিল? নাকি ছিল আমার মনের সৃষ্টি?
উত্তর জানা নেই।
📌 উপসংহার:-
প্রতি বছর "রাখি" আসে, ভাইফোঁটা আসে — কিন্তু আজ শুধুই ফাঁকা লাগে।
ভালোবাসা, স্মৃতি আর অভাব—এই তিনে গাঁথা রয়ে গেলো শেষ দেখা।
🕯️ “একবার যদি ফিরে আসতে পারিস দিদি… শুধু একটা বারের জন্য…”
No comments:
Post a Comment