ফিরে দেখা: বড়মার পুজোর ত্রিনয়নী রহস্য ফাঁস হলো! | Part 2 - Bengali Mystery Story
👉 প্রথম পর্ব পড়ুন: ফিরে দেখা: বড়মার পুজোর রহস্য | Part 1
সূচিপত্র
:
🔶 খোঁজ ত্রিনয়নী…
শুরু হলো খোঁজা খুঁজি। এই ত্রিনয়নী ছাড়া পুজো একেবারেই অসম্ভব, পুরোহিত মশাই জানালেন।
এত আলো, লোক জন, হৈ হুল্লোড় — কোথায় গেলো সব? কে বা নিলো এই ত্রিনয়নী? এতটা সাহস কে বা দেখালো?
প্রাণের ভয় না থাকলেও ভবিষ্যতের ভয় তো থাকে মানুষের। এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখি ঠাকুর মশাই সবাইকেই ডাকছেন।
আমরাও মন্দিরের সামনে গিয়ে দেখি — মায়ের জন্য আনা ভোগের সব আয়োজন কেউ নষ্ট করে দিয়েছে।
🔶 অনাচার ও ইঙ্গিত :-
এরূপ অনাচার কেনো মা? কোন ইঙ্গিত দিচ্ছিস মা?
ঠাকুর মশাই যেনো এই ব্যাপারটাই অস্থির হয়ে যাচ্ছেন, কোনোভাবেই যেনো এটা মানতে পারছেন না।
তিনি বললেন, এই বিপদ না কাটা অবধি মায়ের মুখ থাকবে লাল চাদরে ঢাকা।
আমরা সবাই মন্দিরে বসে আছি, কারো মুখে কোনো শব্দ নেই।
🔶 পারিবারিক সংঘর্ষ ও মতভেদ
“দাদাবাবু, চলো তোমায় খাইয়ে দি,” কাকী মা বললেন।
না, “ওকে আমি খাইয়ে দেবো,” দাদা বলল।
“আচ্ছা যা হইছে, হচ্ছে, চলো আমরা খেয়ে নিই, এত পুরোনো জিনিসটা নতুন বানিয়ে নিলেই তো হয়ে যায়, পুজো করে নেবো।”
এই কথাতে বাবা প্রচণ্ড রেগে গেলেন, “কি বলছিস! পূর্বপুরুষের দেয়া ত্রিনয়নী না খুঁজে আমরা নতুন কিনব?”
এক কথা দু কথায় শুরু হলো কথা কাটাকাটি।
মা, কাকীমা কোনোভাবে এটা থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবাই নিজের ঘরে চলে গেলো যাতে এই ব্যাপারটা লোকজন জানাজানি না হয়।
👉 প্রথম পর্ব পড়ুন: ফিরে দেখা: বড়মার পুজোর রহস্য | Part 1
🔶 ভ্রাতৃস্নেহ ও প্রতিজ্ঞা:আমি, ভাই আর বর্ষা তখনও ব্যাপারটা চুপ করে দেখে যাচ্ছি।
“দিদিভাই, আমরা যদি পুলিশ হতাম তাহলে তো এটা খুঁজে দিতাম তাই না?” বর্ষা বলল।
এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই, তবে মনে হলো — আমি একটু চেষ্টা করে দেখি।
দুপুরে আমি চুপ করে দালানে বসে বসে ভাবছি — এই ঘটলো কেমন করে?
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া আসলো। আমি মন্দিরে প্রদীপ নিভে না যায় তার চেষ্টা করলাম।
তখনই একটা জবা ফুল আমার মাথা হতে হাতে পড়ে গেলো।
কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তিনি? আমি চুপ করে বসে পড়লাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম — এই ত্রিনয়নী না পাওয়া অবধি আমি জল গ্রহণ করব না। এর উদ্ধার আমাকে করতেই হবে।
🔶 গুমর ফাঁস হবার সূচনা
আমি পুরো ঘটনা টা পুনরাবৃত্তি করলাম।
হঠাৎ মনে হলো — বৌদি ভাইকে তো কোথাও দেখতে পারছিনা।
শুভ্র এত বদমেজাজি থাকা সত্ত্বেও এই নিয়ে কোনো কথা বলল না!
আমি একবার বৌদি ভাইয়ের ঘরে গিয়ে দেখি — বৌদি রুমে নেই। উঠোন বা দালানেও কোথাও নেই।
ছাদে উঠতে যাবো এমন সময় বাইরের বাগান থেকে শুভ্রাকে তাড়াহুড়ো করে তার ঘরে ঢুকতে দেখলাম। একটু বিষন্ন হলাম।
আমি বাগানে গিয়ে দেখি বৌদি ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম, “তোমায় সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে খুঁজলাম, কোথাও পেলাম না — তাই এখানে আসলাম।”
সে একটু ইতস্তত করে বলল, “আচ্ছা আমি এখন বাড়ি যাই,” বলেই তাড়াহুড়ো করে ভেতরে চলে গেলো।
🔶 গাছের নিচে লুকোনো সত্য
এই পুরো ঘটনায় কোনোভাবেই যাতে পুলিশ না জানে — স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল দাদাভাই।
প্রায় সন্ধ্যা নামছে, হঠাৎ দেখি দাদুর হাতে লাগানো রক্ত জবা ফুলটা যেখানে বৌদি ভাই দাঁড়িয়েছিল, সেখানকার গাছটা যেন শুকিয়ে গেছে, ফুলগুলোয় যেনো শুকনো ভাব।
আমি কাছে গিয়ে দেখি গাছের মাটি কেমন যেনো উস্কোখুস্কো।
আমি ঘরে গিয়ে ভাই আর বর্ষাকে ডাকলাম। বললাম, “দুটো প্রদীপ জ্বালিয়ে নিয়ে আসো।”
আমরা তিনজন মিলে ওই জবা ফুলের গাছটার নিচে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম।
আর তারপর আমরা অবাক হয়ে দেখি — লাল কাপড়ে মোড়ানো সেই ত্রিনয়নীটা…
🔶 ধরা পড়লো পাপ কাজ
আমরা চিৎকার করে সবাইকে ডাক দিলাম।
সবাই তাড়াহুড়ো করে আমাদের কাছে আসে। দেখে — লাল ছোট কাপড়ে মোড়ানো সেই ত্রিনয়নী।
এর মাঝে বৌদিকে কোথাও না দেখে আমি তার ঘরে যেতে যাবো — দেখি সে ব্যাগ নিয়ে কোথাও চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আমি গিয়ে তাকে বাধা দিতেই সে জোরে আমাকে ফেলে ছুটে চলে যেতে চাইলো।
আমি চিৎকার করে উঠলাম।
সবাই বৌদিকে ধরে ফেললো।
🔶 প্রকাশ পায় পুরনো প্রতিশোধের কাহিনী
“কেনো করলে বৌমা? কিসের এত লোভ তোমার? কেনো করলে এই পাপ কাজটা?”
আমি যেই কথা টা বলতে পারিনি — আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গেলো।
“আমি চুরি করছিলাম। ভেবেছিলাম এই ত্রিনয়নী আমি বিক্রি করে দেবো। আমি হলাম এই বাড়ির আগের পুরোহিতের মেয়ে। আমার বাবা এই ত্রিনয়নী চুরি করতে গিয়েই এই মণ্ডপে মারা যান। তাই আমি তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছিলাম।”
সবাই চুপ হয়ে গেলো।
🔶 শেষ দৃশ্য: মা নিজের পথ খুঁজে নিলেন
কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে বৌদিকে নিয়ে যাবে সংশোধনাগারে।
মানুষের লোভ আর হিংসা — মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠল।
কাল আবার পুজো শুরু হবে। মা নিজের ত্রিনয়নী নিজেই খুঁজে নিলেন।
যদিও ভাই আর বর্ষার পুলিশের ইচ্ছে আমাকে এই কাজটা করতে সাহায্য করেছে।
👉 প্রথম পর্ব পড়ুন: ফিরে দেখা: বড়মার পুজোর রহস্য | Part 1
👉 প্রথম পর্ব পড়ুন: ফিরে দেখা: বড়মার পুজোর রহস্য | Part 1


No comments:
Post a Comment